ঢাকা, সোমবার, ৭ জুন ২০২১ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮

শিরোনাম :

প্রতীক্ষার প্রহর শেষ, রাত পোহালেই খুলছে স্বপ্ন দুয়ার

📝 অনলাইন ডেস্ক
🕐 ২০২২-০৬-২৫ ০০:০৯:৪৮

প্রতীক্ষার প্রহর শেষ, রাত পোহালেই খুলছে স্বপ্ন দুয়ার

রাত পোহালেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহরের অবসান হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সারাদেশের দৃষ্টি এখন পদ্মা সেতুর দিকে।
শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ অবকাঠামো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এই সেতুর দুই পাড়ের মানুষ ভাসছেন আনন্দ উচ্ছ্বাসে। বন্যাকবলিত এলাকা ছাড়া সারাদেশের মানুষ উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের সব এলাকা থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে অনুষ্ঠেয় জনসভাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সেতুর দুই প্রান্ত সেজেছে নতুন সাজে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় মহাসড়ক তথা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ছেয়ে গেছে রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনে। প্রাণের সে উৎসবের ছটা পড়েছে সবখানে। সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড আর তোরণে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা তদারকি করছেন। তাদের আশা এই সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি জনসমাগম হবে। জনসভা মাঠের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলা করে জনসভা সফল করতে কাজ করছেন তারা।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে অনুষ্ঠেয় এই জনসভায় আগামী নির্বাচন উপলক্ষে শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২৪ জুন) বিকালে শিবচরের জনসভার মঞ্চ এলাকা ঘুরে মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে পদ্মা সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ। মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভাসছে বিশাল আকৃতির একটি নৌকা। তার পাশে পদ্মা সেতুর আদলে ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। দেখে মনে হবে, সেতুর পাশ দিয়ে বড় একটি নৌকা চলছে। সমাবেশের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকার জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যেখানে তৈরি করা হয়েছে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও থাকবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে এ জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন, ৪০ শয্যার তিনটি অস্থায়ী হাসপাতাল, নারীদের বসার আলাদা ব্যবস্থা এবং প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের শ্রোতাদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর ও ৫০০টি মাইকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নদীপথে আসা মানুষের জন্য ২০টি পল্টুন তৈরি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০টায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। পরে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে টোল দিয়ে তিনি সেতু পার হবেন। জাজিরা প্রান্তে এসেও পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করবেন।
উদ্বোধন শেষে শেখ হাসিনা মাদারীপুরের শিবচরে কাঁঠালবাড়িতে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরি ঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমাবেশে যোগ দেবেন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় জনসমাবেশ অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। করোনা পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথম ঢাকার বাইরে জনসভায় যোগ দেবেন তিনি।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবিদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, আমাদের নেত্রী জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছেন আমরা পারি। দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ আমরা দীর্ঘদিন অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিলাম। আমাদের সেই বঞ্চনা আর থাকছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষার কষ্ট আর থাকছে না।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মাদারীপুরবাসী প্রস্তুত উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের শিবচরে আসবেন। জনসভায় ভাষণ দেবেন। তার আগমনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীসহ গোটা মাদারীপুরবাসীর মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। আমরা আশা করছি, এখানে স্মরণকালের বৃহৎ জনসভা হবে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের সবাই আগেভাগে এলাকায় চলে আসছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে দলের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সরকারের বড় অর্জন। দেশের জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠ উপহার এটি। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আমরা বড় ধরনের জনসভা করবো। আর আগামী দেড় বছর পরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। কাজেই এই জনসভা থেকে অবশ্যই নেত্রী আমাদের নির্বাচনের বার্তা দেবেন। দেশবাসীর কাছে নিশ্চয়ই নৌকার জন্য ভোট চাইবেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। পানি থেকে শুরু করে তাদের সব ধরনের সুবিধা দিতে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এছাড়া সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।